
স্টফ রিপোর্টার আকুল হোসেন
গাইবান্ধায় বিএডিসি সেচ প্রকল্পে ঘুষ-বাণিজ্য: পলাশবাড়িতে পাইপ লাইনের বরাদ্দের পাহাড়, অন্য উপজেলায় বঞ্চনা।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর PARTNER প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ সেচনালা বরাদ্দ নিয়ে গাইবান্ধায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জানা যায় ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৮টি স্কীম বরাদ্দ থাকলেও ন্যায্য বণ্টনের পরিবর্তে এক প্রকার বৈম্যমূলক ও অর্থ-বাণিজ্যিক কারসাজি করে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এমনকি পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নে দিঘল কান্দি মৌজায় বেলেরঘাট মাদ্রাসার পার্শ্বে জনাব আব্দুল মালেকের পাইপ লাইন নির্মাণ কাজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোন প্রকার বোরিং নেই, অনুমোদন বিহীন স্কীম এমনকি বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে পাইপ লাইন। অন্যদিকে বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চলমান স্কীমগুলো প্রকল্পের আওতায় আসছে না।
একটি জেলার বরাদ্দ উক্ত জেলার আওতাধীন সকল উপজেলার কৃষকগণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জেলা পর্যায় থেকেই নির্বাহী প্রকৌশলী জাকী সিদ্দিকী ও পলাশবাড়ী র উপ-সহকারী প্রকৌশলী, মোঃ আল জুবায়ের আসিফ এর সাথে যোগসাজসে টাকার বিনিময়ে বরাদ্দের ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। পলাশবাড়ী উপজেলার উপ- সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আল জুবায়ের আসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, পলাশবাড়িতে গোপনে টাকার লেনদেনের মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি পাইপলাইন বরাদ্দ দিয়েছেন । অথচ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ৩-৪টির বেশি বরাদ্দই দেওয়া হয়নি। যেখানে প্রতিটি উপজেলার কৃষকগণ সেচে পানির অপচয় রোধে পাইপ লাইনের আবেদন করলেও সব উপজেলা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পলাশবাড়ী উপজেলায় দিয়েছে ৩০ টির ও বেশি পাইপলাইন। সুন্দরগঞ্জের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন আমিও অনেকদিন ধরে আবেদন করেছি এখনও পাইনি। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল জলিল মিয়া বলেন আমিও পাইনি অনেকদিন যাবত আবেদন করে অফিসে ঘুরতেছি । সাঘাটা থেকে আমিনুল ইসলাম বলেছেন আমিও পাইনি অনেকদিন আগে আবেদন করেছি।সাদুল্যাপুরের এক নলকূপ মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
আমি আবেদন করেছি, আবেদন পাশও হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ পাইনি। গোবিন্দগঞ্জের কাজেম মিয়া বলেন, আমি অনেকদিন যাবত আবেদন করেও পাইনি ।
আরো পড়ুন: সাদুল্লাপুরে ঝোপের ভেতর থেকে নারীর লাশ উদ্ধার
পলাশবাড়ী উপজেলার বেশ কিছু নলকূপ মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বরাদ্দ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এক নলকূপ মালিক বলেন,আমরা জানলে অবশ্যই আবেদন করতাম। কিন্তু আমাদের কাউকে কিছু জানানোই হয়নি।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী জাকী সিদ্দিকীর সাথে একাধিকবার দেখা করতে গেলে তাকেও অফিসে পাওয়া যায়নি। তার মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমার ক্ষমতায় আমি দিয়েছি আপনারা পারলে যা ইচ্ছা তাই করুন।
সংবাদ কর্মীরা তিনদিন অফিসে ঘুরেও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অফিসে না পেয়ে অফিসের গেটে ডিউটিরত আনসার সদস্য ও তার দপ্তরের অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে জানতে পারেন নির্বাহী প্রকৌশলী অনিয়মিত অফিস করেন এবং কর্মস্থলেও থাকেন না।
এছাড়া জানা যায় তার অফিসের পিয়নের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন করে থাকেন ।
কৃষকদের অভিযোগ, এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ শুধু বৈষম্যই তৈরি করছে না, বরং সরকারের কৃষি সহায়তা প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, আর প্রভাবশালীরা টাকার জোরে সুবিধা ভোগ করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এটি একটি প্রকাশ্য দুর্নীতি, যেখানে ন্যায্যতার বদলে টাকা-সুবিধাই হচ্ছে বরাদ্দের মূল চাবিকাঠি।
কৃষি সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষককে সহায়তা দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। কিন্তু যদি টাকা আর প্রভাবের ভিত্তিতে বরাদ্দ বণ্টন হয়, তবে কৃষক বঞ্চিত হবে, দেশের কৃষিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আল জুবায়ের আসিফের সাথে একাধিকবার দেখা করতে সংবাদকর্মীরা তার অফিসে গেলেও তাকে অফিসে দেখা যায়নি। তার মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি পলাশবাড়ি উপজেলায় ২০ টিরও বেশি পাইপলাইন দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। সাধারণ জনগণ বলেন ৫ ই আগস্টের পরেও যদি এরকম দুর্নীতি দেখা যায় তাহলে দেশ স্বাধীন করে কি হলো।